সাত বারের এমপি দবিরুল ইসলামকে মন্ত্রী দেখতে চান ঠাকুরগাঁওবাসী


স্বাধীনতার পর থেকে ঠাকুরগাঁও-২ আসনে সাত বার সংসদ নির্বাচিত হয়েছেন ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ দবিরুল ইসলাম । এর মধ্যে সর্বেশেষ গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিএনপি প্রার্থী জামায়াতের নেতা আব্দুল হাকিমকে দুই লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন এই জনপ্রিয় নেতা । তবে এতবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেও মন্ত্রী পায়নি এই এলাকার মানুষ । তাই এবারের মন্ত্রীসভায় দবিরুল ইসলাম এমপিকে মন্ত্রী সভায় দেখতে চান এলাকাবাসী ।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কুমার রায় মুঠোফোনে বলেন, মন্ত্রীসভায় কারা থাকবেন, এটা নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রীর উপর। তবে ৭ বারের নির্বাচিত সাংসদ হিসেবে মন্ত্রীসভায় স্থান পেলে ঠাকুরগাঁও জেলাসহ উত্তরাঞ্চলের উন্নয়ন আরও গতিশীল এবং ত্বরান্তিত হবে বলে আমি মনে করি।

উপজেলা তাতীলীগের সভাপতি সাদেকুল ইসলাম বলেন, রাজনীতির কঠিন সময়েও তিনি দলের হাল ধরে ছিলেন। সাংসদ থাকাকালীন সময়ে এলাকার ব্যাপক উন্নয়নের পাশাপাশি জনগণের আস্থার একমাত্র ব্যক্তির হিসেবে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। যার প্রমাণ একাদশ সংসদ নির্বাচন। শেষ সময়ে তার সম্মান রক্ষার্থে মন্ত্রীসভায় ৭ বারের নির্বাচিত এমপি দবিরুল ইসলামকে রাখার দাবি জানাচ্ছি প্রধানমন্ত্রীর নিকট।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আসলাম জুয়েল বলেন, মন্ত্রীসভায় স্থান পাওয়ার জন্য সব ধরণের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এমপি দবিরুল ইসলামের রয়েছে। অভিজ্ঞ রাজনীতিবীদদের মধ্যে তিনি একজন। উত্তরবঙ্গে মন্ত্রীসভায় তাঁর স্থান প্রথমে বলে আমি মনে করি।

একই দাবী জানিয়েছেন বালিয়াডাঙ্গী ও হরিপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, কৃষকলীগসহ অঙ্গ সংগঠনগুলোর অন্যান্য নেতাকর্মীরা।

প্রসঙ্গত, ছাত্র জীবন থেকেই বাম রাজনীতির সাথে যুক্ত হন দবিরুল ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন । বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়ন থেকে একটানা তিন বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ১৯৮৬ সালে কমিউনিস্ট পার্টি থেকে । সেবার ভোট পেয়েছিলেন ৩৪,০৬২ টি । প্রতিদ্বন্দি ছিলেন ইজাব উদ্দিন আহমেদ আর কাজী ফাহিম । তাঁরা দুজনে ভোট পেয়েছিলেন যথাক্রমে ২৩, ৮৩৮ ও ২১,৫৩৫ ।

১৯৮৮ সালের নির্বাচনে শুধুমাত্র জাতীয় পার্টি ছাড়া আর কোন বড় দল অংশ নেয়নি বলে নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ ছিল না । ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে আবারও কমিউনিস্ট পার্টি থেকে নির্বাচিত হন দবিরুল ইসলাম । ভোট পান ৪৬,৪৫২ টি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আলতাফুর রহমান পান ১৭,৭০৭ ভোট আর জামায়তে ইসলামীর আব্দুল হাকিম পান ১৭,২৮৮ ভোট। এরপর দবিরুল ইসলাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দেন।

১৯৯৬ সালে প্রথমবার আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন । ৪৮,৩৪৪ ভোট পেয়ে তৃতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন । এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোঃ আসাদুজ্জামান পেয়েছিলেন ২৮,৭৫৭ ভোট আর বিএনপির প্রার্থী জেড মোর্তোজা চৌধুরী তুলা পেয়েছিলেন ২১,৩৪১ ভোট।

২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিস্টতা অর্জন করলেও নিজের আসন ঠিকই ধরে রেখেছিলেন ভোটের জাদুকর দবিরুল ইসলাম । ভোট পেয়েছিলেন ৬২,৪৮৩ টি। বিএনপি জামাত মিলে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছিল। জামায়াত প্রার্থী আব্দুল হাকিমের ৫৭,১৯৬ পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন । জাতীয় পার্টির প্রার্থী সুরেশ চন্দ্রের বাক্সে পড়েছিল ২৪,০৮১ ভোট ।

২০০৮ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগকে এই আসনটি উপহার দেন দবিরুল । বিজয়ী হন ১,০২,৮৩৩ ভোট পেয়ে । এবারও অনেক কাছে চলে আসে জামায়াত । আব্দুল হাকিম ভোট পায় ৯৮,৭৬৫ টি ।

এরপর ২০১৪ সালে ৬ষ্ঠ বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন । এই নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন । দায়িত্ব পান গৃহায়ণ ও গণ পূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির । অবশ্য এর আগের মেয়াদে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিও ছিলেন

No comments